বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়

বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়: ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন বৈভব সূর্যবংশী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিএলে...
Diganta Kumar
বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়

বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়: ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন বৈভব সূর্যবংশী। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আইপিএলে সেঞ্চুরি করে তিনি শুধু রেকর্ডই ভাঙেননি, বরং ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিহারের তাজপুর গ্রামের এই কিশোর ক্রিকেটার ইতিমধ্যেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন অসাধারণ প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং দুর্দান্ত মানসিকতায়।

বৈভব সূর্যবংশী: ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বিস্ময়

শুরুটা ছোট্ট উঠোন থেকে

বৈভবের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয় মাত্র চার বছর বয়সে, বাবার কাছ থেকে। তার বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী একজন কৃষক হলেও ক্রিকেটের প্রতি প্রবল ভালোবাসা ছিল। ছেলের আগ্রহ দেখে বাড়ির পিছনে ছোট্ট জায়গা পরিষ্কার করে ক্রিকেট শেখানো শুরু করেন। নয় বছর বয়সে বৈভব ভর্তি হন সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে তার প্রতিভা নজরে পড়ে প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার, যিনি পরবর্তীতে তার কোচ হন।
মাত্র ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন বৈভব, যা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম কনিষ্ঠ অভিষেক।

রেকর্ডের পর রেকর্ড

বৈভব সূর্যবংশী ২০২৪ সালে বিহারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। এরপর দ্রুতই নজর কাড়েন অনূর্ধ্ব-১৯ এবং বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়। বিনু মাঁকড় ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করেন। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ১৭৭ রান এবং দুইটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে মাত্র ১৩ বছর ২৪১ দিনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক করেন এবং ডিসেম্বরে দেশের সবচেয়ে কম বয়সে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলার রেকর্ড গড়েন।

আইপিএল-এ ইতিহাস

২০২৫ সালের আইপিএল নিলামে মাত্র ১৩ বছর বয়সে রাজস্থান রয়্যালস দলে সুযোগ পান বৈভব। নিলামে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় তাকে দলে নেওয়া হয়। আইপিএল অভিষেকের তৃতীয় ম্যাচেই গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেন, যা আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম এবং ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম। সেই ম্যাচে ৩৮ বলে ১০১ রান করেন, ১১টি ছক্কা ও ৭টি চার মারেন। তার এই ইনিংসের সময় প্রতিপক্ষ বোলার ছিলেন রশিদ খান, ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ সিরাজের মতো তারকা।
শুধুমাত্র ক্রিস গেইলের (৩০ বলে) সেঞ্চুরি তার চেয়ে দ্রুত। বৈভবের এই ইনিংস ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন তোলে এবং তাকে ভবিষ্যতের সুপারস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান ও অর্জন

  • বয়স: ১৪ বছর (জন্ম: ২৭ মার্চ ২০১১)
  • উচ্চতা: ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (আনুমানিক)
  • বাঁহাতি ব্যাটার, মিডল অর্ডার
  • বিহার ও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলে থাকেন
  • আইপিএলে ৩ ম্যাচে ১৫১ রান, সর্বোচ্চ ১০১, স্ট্রাইক রেট ২১৫.৭১
  • ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি (৫৮ বলে)

সংগ্রাম ও অনুপ্রেরণা

বৈভবের সাফল্যের পেছনে রয়েছে পরিবার ও কোচের অবদান। তার বাবা ছেলের জন্য নিজের কৃষিকাজের পাশাপাশি ক্রিকেটের স্বপ্ন বুনেছেন। কোচ মণীশ ওঝা তার প্রতিভা গড়ে তুলেছেন। বিহারের মতো সীমিত সুযোগের জায়গা থেকে উঠে এসে বৈভব দেখিয়ে দিয়েছেন, প্রতিভা ও পরিশ্রম থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বৈভব সূর্যবংশী ইতিমধ্যেই জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির নজরে। ভিভিএস লক্ষ্মণ তার উন্নতি পর্যবেক্ষণ করছেন। ক্রিকেটবিশ্বের বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৈভবের ধৈর্য, টেম্পারামেন্ট ও স্ট্রোক প্লে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বড় কিছু করার সুযোগ করে দেবে।

উপসংহার

বৈভব সূর্যবংশীর গল্প শুধু ক্রিকেট নয়, এটি স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প। তার পথচলা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে এবং ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও সমৃদ্ধ করবে-এমনটাই প্রত্যাশা।

إرسال تعليق