Basava Jayanti 2025 in Bengali

বাসব জয়ন্তী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, বিশেষত কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে
Diganta Kumar
Basava Jayanti 2025

Basava Jayanti 2025 - বাসব জয়ন্তী ২০২৫: ইতিহাস, তাৎপর্য ও উদযাপন

বাসব জয়ন্তী দক্ষিণ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, বিশেষত কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের তৃতীয় দিনে (২০২৫ সালে ৩০ এপ্রিল) পালিত হয় এই উৎসবটি, যা ১২ শতকের সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক ও কবি বাসবন্নার জন্মবার্ষিকী হিসেবে চিহ্নিত। কর্ণাটক রাজ্যে এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষিত হয়েছে।

বাসবন্নার জীবনী ও দর্শন

বাসবন্না (বা বাসবেশ্বর) জন্মগ্রহণ করেন ১২ শতকে, কল্পিতভাবে বাগেওয়াড়ি (বর্তমান কর্ণাটক) অঞ্চলে। তাঁর পিতার নাম ছিল মাদারাস ও মাতার নাম মাদালাম্বে। শৈশবে তিনি কুদলাসাঙ্গামায় বড় হন এবং পরবর্তীতে গঙ্গাম্বিকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন বিজ্জলার প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। বিজ্জলা ছিলেন কালচুরি রাজবংশের রাজা। বাসবন্না প্রথমে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং পরে রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন।

বাসবন্না ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, যিনি তৎকালীন কঠোর জাতিভেদ প্রথা ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তিনি লিঙ্গায়ত ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, যেখানে ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক সমতা ও মানবতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাঁর দর্শনের মূল কথা ছিল-জন্ম, জাতি বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা। তিনি “অনুভব মণ্টপ” নামে একটি সভার সূচনা করেন, যা আধুনিক সংসদের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে সমাজের সব স্তরের মানুষ মুক্তভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন।

বাসব জয়ন্তীর তাৎপর্য

বাসব জয়ন্তী শুধুমাত্র বাসবন্নার জন্মোৎসব নয়, বরং এটি তাঁর আদর্শ ও দর্শনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। বাসবন্নার শিক্ষা আজও প্রাসঙ্গিক-তিনি নারী অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও জাতিবিহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর রচিত “বচন” কাব্যগুলি সাধারণ মানুষের ভাষায় ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে। বাসব জয়ন্তী উপলক্ষে তাঁর দর্শন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়।

উদযাপনের রীতি ও আয়োজন

কর্ণাটক ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে বাসব জয়ন্তী উপলক্ষে নানা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বড় বড় শহরে বাসবন্নার প্রতিকৃতি নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন স্থানে সেমিনার, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বাসবন্নার শিক্ষা ও দর্শন নিয়ে আলোচনা হয়। কর্ণাটকের জগত সার্কেলের বাসবেশ্বর মূর্তির সামনে পতাকা উত্তোলন ও শোভাযাত্রা উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ। কোথাও কোথাও তিন দিনব্যাপী উৎসব পালিত হয়।

ছুটির দিন ও ব্যাংক-অফিসের কার্যক্রম

২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল কর্ণাটক রাজ্যে বাসব জয়ন্তী ও অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিনে কর্ণাটকের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ, নগদ লেনদেন, চেক ক্লিয়ারেন্স বা ঋণের কাগজপত্রের কাজ এই দিনে হবে না। তাই ব্যাংক সংক্রান্ত জরুরি কাজ আগেভাগেই সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য রাজ্যে এই ছুটি প্রযোজ্য নয়।

বাসব জয়ন্তীর আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা

বাসবন্নার শিক্ষা ও দর্শন আজকের সমাজেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সামাজিক সমতা, নারী-পুরুষের সমানাধিকার, জাতিবিহীন সমাজ-এসব আজকের গণতান্ত্রিক সমাজের মূল ভিত্তি। বাসব জয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানবিকতা, সহিষ্ণুতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বীজ বপন করা হয়। তাঁর “বচন” কবিতাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়।

উপসংহার

বাসব জয়ন্তী কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের উৎসব। বাসবন্নার আদর্শ ও দর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন সকল মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদা পাবে। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ চিরকাল যুগোপযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তাই বাসব জয়ন্তী উদযাপন মানে-সমাজে ন্যায়, সমতা ও মানবিকতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।

Post a Comment