আজ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার হাত ধরে আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনার সূচনা

আজ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার হাত ধরে আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনার সূচনা: আজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা রাজধানীতে...
Diganta Kumar
আজ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার হাত ধরে আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনার সূচনা

আজ দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার হাত ধরে আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনার সূচনা

আজ, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা রাজধানীতে আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনার (Ayushman Bharat Vay Vandana Yojana) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করছেন। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দিল্লির ৭০ বছর ও তার ঊর্ধ্বে সকল প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে লাখ লাখ প্রবীণ নাগরিক বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের আর্থিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগ অনেকটাই দূর করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হচ্ছে থ্যায়াগরাজ স্টেডিয়ামে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি উপস্থিত থাকবেন।

আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনা কী?

আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনা হল কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সামাজিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প, যা মূলত প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রণীত। এই স্কিমের আওতায় ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকরা বছরে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে স্বাস্থ্যবিমা ও চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এই সুবিধা তাঁদের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে না, অর্থাৎ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল প্রবীণ নাগরিকই এই সুবিধা পাবেন।
এই কার্ডের মাধ্যমে সমস্ত প্রাক-বিদ্যমান রোগও কভার হবে এবং চিকিৎসার জন্য কোনো প্রকার খরচ বহন করতে হবে না।

যোজনার মূল বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাসমূহ

  • ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী দিল্লির সব নাগরিকের জন্য বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা কভার।
  • সামাজিক বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে কোনো বাছাই নেই-সকল প্রবীণ নাগরিকই এই সুবিধা পাবেন।
  • প্রাক-বিদ্যমান সমস্ত রোগের চিকিৎসা প্রথম দিন থেকেই অন্তর্ভুক্ত।
  • ১,৯৬১টি স্বাস্থ্য সুবিধা প্যাকেজ ও ২৭টি মেডিকেল স্পেশালিটির অন্তর্ভুক্তি।
  • প্রতি পরিবারে অতিরিক্ত ৫ লক্ষ টাকার টপ-আপ কভার দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে।
  • ১,১৩৯টি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির (প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র) স্থাপনের পরিকল্পনা, যাতে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে ১৪-১৫টি কেন্দ্র থাকবে।
  • কার্ডধারীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, জরুরি তথ্য ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য রেকর্ড সংরক্ষণ।
  • বিনামূল্যে ওষুধ, চিকিৎসা ও হাসপাতালে ভর্তি সুবিধা।

কারা এই যোজনার আওতায় আসবেন?

দিল্লির যেকোনো নাগরিক, যাঁর বয়স ৭০ বছর বা তার বেশি, তিনি এই যোজনার আওতায় আসবেন। অর্থাৎ, কোনো ধরণের আর্থিক বা সামাজিক মানদণ্ড এখানে প্রযোজ্য নয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দিল্লিতে প্রায় ৬ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক এই সুবিধার আওতায় আসবেন এবং তাঁদের পরিবারসহ প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন।
ইতিমধ্যে ১,৬৯,০০০ আয়ুষ্মান কার্ড প্রস্তুত এবং দ্রুতই বিতরণ শুরু হবে। জেলা পর্যায়ে এই কার্ড বিতরণ করা হবে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপযুক্ত নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ৭০-৭৯ বছর বয়সীদের, কারণ তাঁদের চিকিৎসা প্রয়োজন তুলনামূলক বেশি।

কীভাবে কার্ড বিতরণ ও রেজিস্ট্রেশন হবে?

২৮ এপ্রিল থেকে দিল্লির বিভিন্ন জেলা অফিস ও নির্ধারিত স্থানে বড় পরিসরে রেজিস্ট্রেশন শুরু হচ্ছে। প্রত্যেক প্রবীণ নাগরিকের জন্য একটি স্বাস্থ্য কার্ড তৈরি হবে, যেখানে তাঁদের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য রেকর্ড, নিয়মিত চেক-আপের তথ্য ও জরুরি চিকিৎসা তথ্য থাকবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপযুক্ত সরকারি স্থানে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের জন্য।
এই কার্ডের মাধ্যমে প্রবীণরা সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের বিস্তার ও গুরুত্ব

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প (Pradhan Mantri Jan Arogya Yojana - PM-JAY) ২০১৮ সালে চালু হয় এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প। ভারতের প্রায় ৫৫ কোটির বেশি মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় এসেছেন। দিল্লি ৩৫তম রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এই প্রকল্পের ফলে দেশের গরিব ও দুর্বল জনগণ সময়মতো ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে না।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আওতায় ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৯০% বেশি মানুষ ৩০ দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছেন।

দিল্লিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রভাব

দিল্লিতে এই প্রকল্প চালু হওয়ার ফলে প্রবীণ নাগরিকরা যেমন সরাসরি উপকৃত হবেন, তেমনি তাঁদের পরিবারগুলিও আর্থিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন। চিকিৎসা খরচ কমে আসবে, কারণ এখন থেকে সরকারি ও অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া যাবে।
রাজধানীর প্রায় ৬.৫৪ লক্ষ পরিবার ও ৬ লক্ষ প্রবীণ নাগরিক এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন।

উদ্যোগের সামাজিক গুরুত্ব

মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা জানিয়েছেন, “বয় বন্দনা যোজনা কেবলমাত্র একটি সরকারি প্রকল্প নয়, বরং প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।” প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার এই উদ্যোগ তাঁদের জীবনের গুণগত মান উন্নত করবে এবং তাঁদের প্রতি সমাজের দায়িত্ববোধকে আরও দৃঢ় করবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবীণরা নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, প্রাথমিক চিকিৎসা, ওয়ার্নিং সিস্টেম ও জরুরি সেবার সুবিধা পাবেন।

উপসংহার

আয়ুষ্মান ভারত বয় বন্দনা যোজনা দিল্লির প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এক নতুন আশার আলো। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার নেতৃত্বে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে রাজধানীর প্রবীণরা স্বাস্থ্যসেবা ও আর্থিক নিরাপত্তা-দুটোই একসঙ্গে পাবেন। এই উদ্যোগ শুধু দিল্লি নয়, গোটা দেশের জন্যই এক অনুকরণীয় পদক্ষেপ, যা প্রবীণদের প্রতি সম্মান ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

إرسال تعليق