BR Gavai appointed Chief Justice of India

BR Gavai appointed Chief Justice of India: ভারতের বিচার বিভাগে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো। বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই (BR Gavai) দেশের ৫২তম
Diganta Kumar
BR Gavai appointed Chief Justice of India

BR Gavai appointed Chief Justice of India: ভারতের বিচার বিভাগে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হলো। বিচারপতি ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই (BR Gavai) দেশের ৫২তম প্রধান বিচারপতি (Chief Justice of India) হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। ২০২৫ সালের ১৪ মে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার স্থলাভিষিক্ত হবেন তিনি। বিচারপতি গাভাইয়ের মেয়াদ ছয় মাসেরও বেশি, তিনি ২৩ নভেম্বর ২০২৫-এ অবসর নেবেন।

BR Gavai appointed Chief Justice of India

দ্বিতীয় দলিত প্রধান বিচারপতি: সামাজিক ন্যায়ের বার্তা

বিচারপতি গাভাই ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় দলিত ব্যক্তি যিনি দেশের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হলেন। এর আগে কেজি বালাকৃষ্ণন ২০১০ সালে প্রথম দলিত প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। গাভাইয়ের এই নিয়োগ ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে এক বড় পদক্ষেপ।

বিচারপতি গাভাইয়ের পেশাগত জীবন ও অবদান

১৯৬০ সালের ২৪ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে জন্মগ্রহণ করেন ভূষণ রামকৃষ্ণ গাভাই। ১৯৮৫ সালের ১৬ মার্চ আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৩ সালে বোম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০০৫ সালে স্থায়ী বিচারপতি হন। ২০১৯ সালের ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে উন্নীত হন তিনি।

বিচারপতি গাভাইয়ের বিচারিক অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একাধিক সাংবিধানিক বেঞ্চের সদস্য ছিলেন, যেগুলো ভারতের বিচারব্যবস্থায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তকে সর্বসম্মতভাবে বৈধ ঘোষণা করেন যে বেঞ্চ, তার সদস্য ছিলেন গাভাই। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার হয়।
  • রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনতে ইলেকটোরাল বন্ড স্কিম বাতিল করেন যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ, তাতেও ছিলেন তিনি।
  • ২০১৬ সালের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বৈধ ঘোষণা করেন যে বেঞ্চ, সেখানেও ছিলেন গাভাই।
  • তিনিই সেই সাত বিচারপতির বেঞ্চের সদস্য, যারা রায়ে বলেন, সংরক্ষিত শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীর জন্য রাজ্যগুলো উপশ্রেণি তৈরি করতে পারে। এতে সামাজিক ন্যায় আরও সুসংহত হয।
  • অবৈধ ভাঙচুর বন্ধে দেশজুড়ে নির্দেশিকা জারি করেন, যাতে কোনো সম্পত্তি ভাঙার আগে ১৫ দিনের নোটিশ দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জবাব দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
  • বন, বন্যপ্রাণী ও গাছ সংরক্ষণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর বেঞ্চও বর্তমানে তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিচারপতি গাভাইয়ের ব্যক্তিগত ও পেশাগত পরিচিতি

গাভাইয়ের বাবা রামকৃষ্ণ সূর্যভান গাভাই (দাদাসাহেব) ছিলেন বিশিষ্ট দলিত নেতা ও বিহারের প্রাক্তন রাজ্যপাল। বিচারপতি গাভাই নিজেও নাগপুর ও অমরাবতী কর্পোরেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি সরকারি আইনজীবী ও অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি হিসেবেও কাজ করেছেন।

বিচারপতি গাভাইয়ের আইনজীবী জীবনের শুরুতে তিনি রাজা এস ভোঁসলে (প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল ও বোম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি)-এর সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৯০-এর পর থেকে মূলত নাগপুর বেঞ্চে সংবিধান ও প্রশাসনিক আইন নিয়ে চর্চা করেন।

নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সাংবিধানিক গুরুত্ব

সংবিধানের ১২৪(২) অনুচ্ছেদের অধীনে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে গাভাইয়ের নাম সুপারিশ করেন। সুপ্রিম কোর্টে প্রবীণতম বিচারপতিকে সাধারণত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের রীতি রয়েছে।

সমাজে বার্তা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

বিচারপতি গাভাইয়ের নিয়োগ ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক। তাঁর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট আরও শক্তিশালী ও ন্যায়নিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংবিধান ও আইনের শাসন রক্ষায় বিচারপতি গাভাইয়ের অভিজ্ঞতা ও দৃঢ়তা দেশের বিচারব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

বিচারপতি গাভাইয়ের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ভারতীয় বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

Post a Comment